পাহাড়ধসে মৃত্যু

কক্সবাজার প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে

সম্পাদকীয় :

চলতি বছরের বর্ষাকাল কক্সবাজারের জন্য রীতিমতো এক আতঙ্ক তৈরি করেছে। জেলা শহরটিতে একের পর এক পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। গত তিন সপ্তাহে পৃথক কয়েকটি ঘটনায় পাহাড়ধসে পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে। টানা বর্ষণ ঘটলেই পাহাড়ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়। দুঃখজনক হচ্ছে, এরপরও বন্ধ হয়নি পাহাড় কাটা ও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। এতে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

গত বুধবার বিকেল থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভারী বর্ষণ হয় কক্সবাজার জেলায়। এতে বৃহস্পতিবার দিনে ও সন্ধ্যায় কক্সবাজার পৌর এলাকার কয়েকটি এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। সেদিন পৃথক ঘটনায় মারা যায় এক শিশুসহ দুই নারী।

নিহত ব্যক্তিদের বাড়ি একদম পাহাড়ের গোড়ায়। বলতে গেলে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে সেসব ঘর। ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরীপাড়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এবিসি ঘোনা এলাকা এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এলাকায় এসব পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ২১ জুন ভোর চারটার দিকে শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে এক দম্পতির মৃত্যু হয়।

বারবার পাহাড়ধসের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও অন্য কর্তৃপক্ষগুলোর ব্যর্থতা সামনে আসছে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, লাউডস্পিকার ঘোষণার মাধ্যমে ভূমিধসের বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি ঢালে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। কক্সবাজার পৌর মেয়রও বলছেন, টানা ভারী বর্ষণের কারণে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা লোকজনকে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে এলাকায় প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শুনলে মনে হবে, তারা যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে। আমরা তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। কিন্তু বিষয় হচ্ছে, পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারী ব্যক্তিরা আসলে এভাবে ঘর ছেড়ে যেতে চান কি না। ঘর চুরির ভয়ে বা সামান্য সহায়–সম্বলের মায়া ত্যাগ করে ঘূর্ণিঝড়ের সময় অনেক মানুষ যেমন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না, পাহাড়ধসের ঘটনায়ও একই বাস্তবতা দেখা যায়। এরপরও অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে।

তবে পাহাড় কেন কাটা হচ্ছে এবং সেখানে কীভাবে ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে, এসব প্রশ্নের উত্তরও প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। সারা বছর পাহাড় কাটা রোধে এবং পাহাড় ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়? কক্সবাজারে পাহাড়ধস বন্ধে দরকার সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। স্থানীয় প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে আমরা সেটিই দেখতে চাই।

আরও খবর